একজন মুমিনের জন্য রমজান মাসের প্রস্তুতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । রোজার বিষয়ে অনেকের ধারণা বদলে গেছে। তারা এই রমজান মাসকে করে তুলেছে নানাধরণের সুস্বাদু খাবার, মিষ্টি ও পুডিং এবং স্যাটেলাইট চ্যানেল উপভোগ করার জন্য। তারা রমজান মাসের আগে থেকেই এ জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে; কিছু খাদ্য ক্রয় এড়িয়ে যেতে পারে বা দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এইভাবে তারা খাবার কিনে, বিভিন্ন ধরনের পানীয় তৈরি করে এবং বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলের অনুষ্ঠান অনুসন্ধান করে কোন অনুষ্ঠান দেখতে হবে এবং কোনটি দেখা যাবে না তা জানার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তারা আক্ষরিক অর্থেই রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা এই মাসটিকে ইবাদত ও তাকওয়ার পরিবর্তে পেট ভরা ও চক্ষুদানের মৌসুমে পরিণত করেছেন। অন্যদিকে, কিছু মানুষ রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন। কেউ কেউ আবার শাবান মাসের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
এখানে কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ রয়েছে যা আপনি রমজানের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য গ্রহন করতে পারেন:
১। আন্তরিকভাবে অনুশোচনা করুনঃ সব অবস্থাতে তাওবা ফরজ। যাইহোক, যেহেতু ব্যক্তি একটি মহান মাসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাই তাকে অবিলম্বে তার নিজের মধ্যে বিদ্যমান গুনাহ এবং তার অন্য মানুষের প্রতি অধিকার লঙ্ঘনকারী বিষয়গুলি থেকে তওবা করা উচিত। যাতে সে পবিত্র মন ও প্রশান্ত চিত্তে এই বরকতময় মাসে প্রবেশ করতে পারে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে মগ্ন থাকতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।(সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১)
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আমি দিনে ১০০ বার তওবা করি।(মুসলিম : ৭০৩৪)।
২। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করাঃ কিছুসংখ্যক তাবে-তাবেয়ীনদের থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা ৬ মাস আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন- যাতে আল্লাহ তাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। তারা রমজানের পর পাঁচ মাস প্রার্থনা করতেন-যাতে আল্লাহ তাদের আমলকে কবুল করেন। তাই একজন মুসলমানের উচিত বিনীতভাবে তার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করা : আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখেন এবং তাকে উত্তম তাকওয়া সহ রমজান পর্যন্ত জীবিত রাখেন। একজন মানুষের আরও প্রার্থনা করা উচিত, আল্লাহ তাকে যেন নেক আমল করার জন্য সাহায্য দান করেন। তিনি আরো দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তার নেক-আমল কবুল করেন।
৩। এই মহান মাসের আগমনে আনন্দ করুনঃ রমজান মাস পাওয়া একজন মুসলমানের জন্য আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত। রমজান যেহেতু কল্যাণের মুহুর্ত। এ সময় জান্নাতের দরজাগুলো খোলা রাখা হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয়। রমজান হল কুরআনের মাস, জিহাদী অভিযানের মাস যা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করে।
তাদের বলে দাওঃ আল্লাহর এই দান ও রহমতের প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত; তা দুনিয়াবী সম্পদ হতে বহু গুণে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে। “(সূরা ইউনুস, আয়াত৫৮)
৪।যে কোনো ফরয রোযা থেকে অব্যাহতি যদি তা কারো দায়িত্বে থেকে যায়ঃ আবূ সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আমার কাছে যদি শেষ রমযানের রোযা বাকি থাকতো তবে শাবান মাস ব্যতীত তা পালন করতে পারতাম না। (বুখারি, হাদিস: ১৮৪৯; মুসলিম, হাদিস: ১১৪৮) হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, “শাবান মাসে বাকি রোজা রাখার জন্য আয়েশার চেষ্টার অর্থ হল, রমজানের বাকি রোজাগুলো অবশ্যই পরবর্তী রমজানের আগে পালন করতে হবে।” (ফাতহুল বারীঃ ৪/১৯১)
৫. রমজানের মাসআলা ও রমজানের ফজিলত সম্পর্কে প্রশিদ্ধ ব্যাক্তি ও হক্কানী আলেমদের পরামর্শ এবং তাদের শরণাপন্ন হয়ে শিক্ষা লাভ করবেন।
৬। রমজান মাসে একজন মুসলমানের ইবাদতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এমন বিষয়গুলি থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
৭। স্ত্রী-সন্তানসহ পুরো পরিবারের সাথে বসে রমজানের মাসআলা নিয়ে আলোচনা করা এবং সন্তানদেরকে রোজা পালনে উৎসাহিত করা।
৮। ঘরে বসে পড়া যায় এমন বই সংগ্রহ করা বা মসজিদের ইমামকে উপহার হিসেবে দেওয়া- যাতে সে মানুষদের পড়তে উৎসাহ করতে পারে।
৯। রমজানের রোজার প্রস্তুতির জন্য শাবান মাসে কিছু রোজা রাখুন, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে আমরা বলতাম- আমি আর রোজা ভঙ্গ করব না। । আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান মাস ব্যতীত অন্য কোনো মাসের পুরো অংশ রোজা রাখতে দেখিনি কিন্তু তুলনামূলক ভাবে অন্যমাসের চাইতে শাবান মাস এ বেশি রোজা রাখতেন। (বুখারি, হাদিস: ১৮; মুসলিম, হাদিস: ১১৫৮)
উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! শাবানের মত এত বেশি রোজা আর কোন মাসে রাখতে দেখিনি। তিনি বললেন, এটা রজব ও রমজানের মাঝামাঝি মাস। মানুষ এ মাস সম্পর্কে উদাসীন। অথচ এ মাসে বান্দাদের আমল রাব্বুল আলামীনের কাছে সরাসরি পৌছে যায়। (নাসায়ী, হাদিস : ২৩৫৬) এই হাদিস শাবান মাসে রোজা রাখার হিকমত বর্ণনা করে। সে জ্ঞানী যে রমজান মাসে বেশি বেশি করে নেক আমল করে। অন্য একজন আলেম উল্লেখ করেছেন যে, শাবান মাসের রোজা ফরজ নামাযের আগের সুন্নাত নামাযের মত। এ সুন্নতের মাধ্যমে আত্মাকে নিজ দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করা হয়।রমজানের আগে শাবানের রোজা সম্পর্কেও বলা যেতে পারে।
১০। কুরআন তেলাওয়াত করাঃ সালামা ইবনে কুহাইল বলেন, শাবান মাসকে তিলাওয়াতের মাস বলা হয়। শাবান মাস শুরু হলে আমর ইবনে কায়স তার দোকান বন্ধ করে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য বিরতি নিতেন। আবু বকর আল-বলখী বলেন, ‘রজব মাস বীজ রোপণের মাস। শাবান মাস ক্ষেতে সেচের মাস এবং রমজান মাস ফসল কাটার মাস। তিনি আরও বলেন, ‘রজব মাসের উদাহরণ বাতাসের মতো, শাবান মাসের উদাহরণ মেঘের মতো, রমজান মাসের উদাহরণ বৃষ্টির মতো। তাহলে যে ব্যক্তি রজব মাসে বীজ রোপণ করেনি বা শাবান মাসে সেচ দেয়নি, সে কিভাবে রমজান মাসে ফসল কাটাতে চায়?
আপনার কাছে প্রশ্ন,আপনি কি এর আগে রমজান নিয়ে ভেবেছেন আর ভেবে থাকলে রমজান মাস নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
আমাদের লেখা দ্বারা আপনি উপকৃত হলে আমাদের iombd.org ওয়েবসাইটটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ সকলকে।
You can also subscribe to podcasts or Youtube channels. Here are our pages:
Facebook Mohammad Ali
Youtube IOMBD
Twitter IOMBD
Go abroad:
The best way to learn Arabic fast is to travel to an Arabic country. You will be surrounded by many Arabic speakers.
There is another way if you are connected to work or even if you do not find enough money to travel, online study saves you time and money, follow our page and stay tuned for our Free videos and articles or book your Arabic course now from